শরদিন্দুকে ধন্যবাদ এ ই লেখাটি লেখার জন্য!বাকী দেশে
অন্য ভাষায় আম্বেডকর আন্দোলন নিয়ে যে খোলা বিতর্ক
শুরু হয়েচে, সে সম্পর্কে একটি ধারণা দেওয়ার জন্য!
জয়পুর চন্ডীগড় একাকার হয়ে গেছে বাঙ্গালি
সমাজবিজ্ঞানী ও সাবআলটার্ণ বুদ্ধিজীবীদের দৌলতে!
বাংলা দলিত আন্দোলন দখল করে বসে আছেন এরাঁ!
দলিত সাহিত্যেও এঁদেরই জয়জয়কার!লোক সাহিত্য,
লোক সঙ্গীতে ও এঁদেরই আধিপাত্য! বাঙ্গালি অর্থনীতি
বিদ, বাঙ্গালি রাজনৈতিক নেতারা ও বিশেষকরে এই
সাবআলটর্ণ সমাজবিজ্ঞানী সমুহ ভারতে বহুজনসমাজের
আন্দোলন কে নসাত করতে আম্বেডকরের পিছনে
লেগেছেন!আনন্দ তেলতুম্বড়ের বক্তব্যকে বিকৃত
করেছেন!আনন্দ বক্তব্য জারি করে বলেছেন যে
ব্রাহ্মণ্যতান্ত্রিক মানসিকতায়, হিন্দুত্বের এজন্ডায়
বামপন্থীরা সবচেয়ে আক্রামক আম্বেডকরের বিরুদ্ধে!
আম্বেডকরকে সাম্রাজ্যবাদ পুঁজিবাদের সমর্থক বলেই
ক্ষান্ত হননি!আম্বেডকররের লেখাকে ভারতে মুক্ত
বাজারের পরিকাঠামো সাব্যাস্ত করছেন! খোলাখুলি
সিপিএম, সিপিআই ও লিবারেশন কে সংশোধনবাদী
গদ্দার বলে উদাত্ত আহ্বান করছেন আম্বেডকরকে
বিসর্জন করতে!আম্বেডকরের সংবিধান রদ করতে!
সংরক্ষণকে অপ্রাসঙ্গিক ও আম্বেডকর অনুযায়ীদের
সংরক্ষণে মলাইদার হয়ে যাওয়া অর্দ্ধশিক্ষিত বলছেন!তবু
বাংলার বহুজন সমাজে প্রতিক্রিয়া নেই!বাংলার
বামপন্থীরা যারা মার্ক্স আম্বেডকর রবীন্দ্রকে নিয়ে ভোট
দখলের রাজনীতি করছেন তাঁরা গাল খেয়ে হজম
করছেন !উদ্দীপনের লেখার সঙ্গে লিন্ক দিয়ে দিলাম !পড়ে
নিন!
সব শিয়ালের এক রা !
আম্বেদকরের Social Inclusion Doctrine ধবংস কর !
শরদিন্দু উদ্দীপন
ভারতের কোন রাজনৈতিক দল জাতপাত চূর্ণ করে মানুষের মধ্যে চিরায়ত বিভেদের দেয়ালটিকে ভাঙতে চায়নি। বরং সযত্নে লালন করেছে। পালন করেছে। আলাদা আলাদা কক্ষের(সেল)আলাদা আলাদা তালা ঝুলিয়ে
(সংখ্যা লঘু,এসসি/এসটি,ওবিসি ইত্যাদি)বিভেদটিকে একটি চিরস্থায়ী বন্দবস্তে পরিণত করে ফেলেছে। আম্বেদকর দর্শণ জাতপাত ভাঙ্গার কথা বলে। বহুজনের পারস্পরিক সহাবস্থানের ভিত্তিতে বিভেদের শেকড় সমূলে উৎপাটন করার কথা বলে।
আম্বেদকর দর্শণের এটাই সব থেকে বড় মূলধন।
ভারতীয় বহুজন সমাজ জাতপাতের কারণেই বঞ্চনার স্বীকার । হিন্দু বর্ণ ব্যবস্থায় সংখ্যা গরিষ্ঠ মানুষকেই জাতের জাঁতাকলে সর্বহারা করা হয়েছে যুগ যুগ ধরে।
জাতপাতকে ধর্মীয় মহিমা দিয়ে মুষ্টিমেয় কিছু মানুষ রাষ্ট্রীয় উৎপাদনের প্রায় সবটাই আত্মসাৎ করছে এটা অবশ্যই রাজনীতি।
যে রাজনীতির পেষা কলে ফেলে সংখ্যা গরিষ্ঠ মানুষকে শুধু সম্পদ থেকে বঞ্চিত করা হয়নি,মর্যাদাহীন করে পশুসুলভ জীবন
যাপন করতে বাধ্য করা হয়েছে। বঞ্চিতের আত্ম বিকাশের অন্তরায়,শোষণ যন্ত্রের এই জগদ্দল পাথরটাকে গুড়িয়ে দেওয়াই আম্বেদকরের মিশন ।
এই মিশন "Survival for the fittest"নয় । নয় struggle for exhistance এর
উন্মত্ত রণহুঙ্কার। বা প্রতিশোধ পরায়ণ ক্ষমতা দখলের দস্তাবেজ । যে লড়াইয়ের অন্য প্রান্তে অবস্থান করে শ্রেণী শ্ত্রু। যাকে রণনীতি বা রণকৌশলের রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের মাধ্যমে পরাভূত করে প্রোলেতারিয়েতের শাসন কায়েম করতে হয় । এই আদিম হিংস্র মানবিকতার বৈদেশিক ব্যখ্যা আম্বেদকরবাদে জায়গা পায়নি। বরং পরম মিত্রতা বা ভাইচারাই চিরস্থায়ী ভাবে বৈরিতার অবসান ঘটাতে পারে, ভারতীয় দর্শনের এই অমর বাণী তিনি মেনে নিলেন।"NAHI BERENA BERANI SAMANTIDHA KUDACHANANG. ABERENA CHA SAMMANTI ESO DHAMMO SANATANO"।
সমাজ বিবর্তনের ইতিহাসে বাবা সাহেব ডঃ বি আর আম্বেদ করের মতাদর্শ কালের এক অনিবার্য ভবিষ্যলিপি। এ মতাদর্শ শুধুমাত্র ভারতবর্ষে নয় বরং সমগ্র পৃথিবীর মঙ্গল বার্তা হিসেবে প্রতিধ্বনিত হচ্ছে।
কলোম্বিয়া ইউনিভার্সিটির "ম্যান অব দি মিলেনিয়াম" খেতাব এবং অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটির "১০০০ বছরের সেরা মনিষী" উপাধি লাভ এই দাবীকে আরো জোরালো করে তুলেছে।
পৃথিবীর সর্বজনের কল্যাণে ক্রমপ্রকাশিত এই আলোক বর্তিকা যে মহামিলনের এক ক্ষেত্রে পরিণত হবে তার আভাস কিন্তু পাওয়া যাচ্ছে দিকে দিকে।
এতে প্রোমাদ গুনতে শুরু করেছে মনুবাদীরা। যাদের এক এবং অদ্বিতীয় এজেন্ডা বর্ণ ব্যবস্থা কায়েম রাখা। এবং আম্বেদকর নির্মিত ভারতীয় সংবিধান সম্পূর্ণ ধ্বংস করে মনুস্মৃতিকে সংবিধান হিসেবে প্রতিষ্ঠা করা।
এ বিষয়ে ২০০৬ সালে বাবরি মসজিদ গুড়িয়ে দেবার পর যে গোপন এজেন্ডা তৈরি করা হয়েছিল তার একটি ধারা এখানে সংযোজিত করলামঃ
" Aj se lagbhag 2000 barsha purba biswa me baudhha dharma ke falte prabhutya ko rokne aaur use samapt karne ke lie hamare purbaja Aadi Snakarachariya bho Gita me ek bisesh Sloka yada yada hi dharmaswa samil kraya gaya. Jiska Arth hay ki jab jab hindu dharma ko koi hani krega may adi sankarachariya usi dharma ya us byakti ko nasht karne ke liye har yug me janm lunga. Aj phir bho samay aa gaya hay ki adharmi Ambedkar ke karan boudhha dharma puna astitya me ane laga hay……Aj hamara ek hi uddeshya hay ki Ambedkar, Ishai missionary ke bacho ko jinda jalaya tatha anushuchit jati, janajati, anna pichhrebarga ke Arakshan ko Supreme Court ke Jajo ki madadse Arakshan samapt krabaya. Ab hamara ek Ambedkar ke sanbidhan ko purnata nast karke desh me lokatantra ke sthan par Ram Rajjya ki sthapana, Bharat ko Hindu rashtra Ghoshit karne, Sanskrit ko rashtrabhasha banana, tatha Manusmriti ke adhar par sanbidhan ki nayi rachana karne ki Aur sanshad me Ambedkar ki murti ko nast karke uske sthan par Manu ki bishal pratima sthapit karna". (After demolishing the Babri Mosque, Hindu Dharnma Sanshad dwara Anumodita Gopaniya Dastabej, Agenda No. 19)
সাম্প্রতি বিজেপির ঘোষিত প্রধান মন্ত্রী পদের দাবিদার গুজরাট গণহত্যার নায়ক মোদির ভাষণে এই জায়নবাদী যুদ্ধের দামামা আমরা শুনতে পেয়েছি।
কিন্তু সব থেকে অবাক করে দিয়েছে বামপন্থীদের আগাম বার্তা। মনুবাদীদের সাথে একই সুরে সুর মিলিয়ে বাবা সাহেব ডঃ বি আর আম্বেদ করের বিরুদ্ধে যুদ্ধোন্মাদনা! এই যুদ্ধের মাষ্টার প্লান যে একই চৌখুপির আদলে তৈরি হয়েছে তা বোঝা যায় পরপর দুটি সম্মেলন থেকে। প্রথমটি সমাজবিজ্ঞানী আশিস নন্দীর জয়পুর কর্পোরেট বই মেলা এবং অপরটি চন্ডীগড়ে আয়োজিত কোলকাতার বামপন্থি বুদ্ধিজীবীদের দ্বারা পরিচালিত সেন্টার ফর সোস্যাল স্টাডিজ এর জাতি বিমর্শ সম্মেলন। এই দুটি সম্মেলনের চরিত্রই এক। একই সুরে ভিন্ন গান। একটিতে মূলনিবাসী বহুজন সমাজকে ভ্রষ্টাচারের জন্য অপরাধী ঘোষণা।
অন্যটিতে মুলনিবাসী বহুজন সমাজের রাষ্ট্র ক্ষমতা অর্জনের ভাগিদারী সামাজিক শৈলীর নির্মাতা বাবা সাহেব ডঃ বিআর আম্বেডকরকে খারিজ করে দেওয়া !
জয়পুর সাহিত্য সম্মলনের মতই চণ্ডীগড় সম্মেলনও বহুজনবিরোধী মঞ্চে পরিণত হয় এবং সেখানে আম্বেডকরকে ভারতীয় আর্থ সামাজিক ও রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে অপ্রাসঙ্গিক হিসেবে ঘোষণা করা হয় এবং তাঁকে পুঁজিবাদ ও সাম্রাজ্যবাদের সমর্থক সাব্যস্ত করার প্রবল চেষ্টা হয়!
অর্থাৎ মূলনিবাসী বহুজনের স্বাধিকার, আত্তবিকাশ, আত্তমর্যাদা,স্বশক্তিকরন ও সক্ষমতা আর্জনের বিপক্ষে মাক্সবাদী-গান্ধীবাদী-মনুবাদীরা সব এক। একই সঙ্গে এটাও পরিষ্কার হয়ে যাচ্ছে যে, বিভিন্ন মতাদর্শের বিচিত্র রঙা সাইনবোর্ডের আড়ালে লুকিয়ে থাকলেও আসলে ওরা এক। ওরা বুঝতে পেরেছে যে, বাবা সাহেবের Social inclusive doctrine ৮৫% মূলনিবাসী বহুজন সমাজকে কেন্দ্রীভূত করে তুলবে। এবং এই ভাগিদারী সামাজিক শৈলী মুলনিবাসী বহুজনদের রাষ্ট্র ক্ষমতার কেন্দ্র বিন্দুতে নিয়ে আসবে।
এবং শ্রেণি-সংগ্রামহীন, হিংসাশ্রয়ী রক্তরঞ্জিত যুদ্ধ ছাড়াই সংঘটিত হবে এক নিঃশব্দ রাষ্ট্র বিপ্লব। সর্বজনের কল্যাণে সর্বজনের রাষ্ট্রীয় উত্থান। আত্তউপলব্ধি ও আত্তিকরণের এমন নিঃশব্দ সামাজিক নির্মাণ সাধিত হলে একই সঙ্গে চতুর্বর্ণের ঘৃণার পাহাড় এবং শোষক-শোষিতের আজন্ম লড়াইয়ের মিথ্যে ধাপ্পা আস্তাকুড়ে জায়গা নেবে।
এটাই ওদের ভয়। তাই সব শিয়ালের এক রা ! একই সঙ্গে (মাক্সবাদ +মনুবাদ+গান্ধীবাদ)আক্রমণ শানাও। ত্রিশূল আর কাস্তেতে শান দাও। রামধুন জপ করো। মাওবাদীদের আমদানি করো। মোদির সাথে গলা মিলিয়ে বল ভারত নির্মাণের জন্য যুদ্ধ চাই। মহাপ্রলয় ছাড়া মহা নির্মাণ হয়না।
না, এ আশঙ্কা একেবারে অনৈতিহাসিক নয়। বরং বাবাসাহেব এমনটাই ভবিষ্যবানী করেছিলেন। মাক্সবাদকে সমাজ পরিবর্তনের একটি অনবদ্য পন্থা হিসেবে স্বীকার করলেও ভারতীয় মাক্সবাদীদের প্রতি তার কোন বিশ্বাস ছিলনা। বরং তিনি বলেছিলেন যে, এরা সবুজ ঘাসের আড়ালে লুকিয়ে থাকে দুমুখো বিষধর সাপ। সুজোগ পেলেই ছোবল মারবে। মনুবাদীদের বংশধরেরাই মাক্সবাদীদের ডিক্লাসড লিডার। তাই মার্ক্সবাদের নামে এরা মনুবাদকেই কায়েম করবে।
এই বিষয়টি আরো পরিষ্কার করে দিয়েছিলেন মান্যবর কাশীরাম জি। তার অমোঘ ঘোষণা ছিল, মূলনিবাসীরা রাজনৈতিক উত্থানের মাধ্যমে রাষ্ট্র ক্ষমতা অর্জনের দিকে এগিয়ে গেলে সব মনুবাদী শক্তি এক হয়ে যাবে।
কারণ সব রসুনের গোড়া এক জায়গায়। যার নাম মনুবাদ। বহিরাগত শোষকদের Divine প্রভুত্বের জীয়ন কাঠি।