|
1:22 PM (2 hours ago)
|
|||
|
How would Mamata create one crore job? For whom reservation declared?
উচ্চ শিক্ষায় রিজার্ভেশন ঘোষণা করলেন মুখ্যমন্ত্রী ?!
ওয়াকিবহাল মহলের মতে, নিতান্তই প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত হলেও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারের ২২ মাসের শাসনে এর থেকে বড় রাজনৈতিক পদক্ষেপ আর একটিও নেই৷ আসন্ন পঞ্চায়েত ভোট তো বটেই, এই সিদ্ধান্ত কার্যকর করা গেলে ভবিষ্যত্ সব নির্বাচনের জন্যই তৃণমূলের যাত্রাপথ অনেকটাই মসৃণ হয়ে যাবে৷ এমনকী, পশ্চিমবঙ্গের রাজনৈতিক ও সামাজিক সমীকরণ বদলে যাওয়াও অসম্ভব নয়৷ পশ্চিমবঙ্গে এ পর্যন্ত ১৪৪টি আর্থিক ভাবে অনগ্রসর শ্রেণি ওবিসি তালিকাভুক্ত হয়েছে৷ এর মধ্যে অতি অনগ্রসর ৬৬টি শ্রেণির সব ক'টিই সংখ্যালঘু মুসলিম সম্প্রদায়ের৷ ১৭ শতাংশ সংরক্ষণের ১০ শতাংশই এই অংশের জন্য বরাদ্দ৷ বাকি ৭৮টি শ্রেণির মধ্যেও ২০টি শ্রেণি মুসলিম৷ এই অংশের জন্য বরাদ্দ বাকি ৭ শতাংশ৷ আসন্ন পঞ্চায়েত ভোটে এ রাজ্যে প্রথম বার ওবিসি'দের জন্য আসন সংরক্ষণ হতে চলেছে৷ এ জন্য গত বছর রাজ্যের পঞ্চায়েত দন্তর পঞ্চায়েত এলাকায় ওবিসি সুমারি করে৷ তাতে জানা গিয়েছে, গ্রাম বাংলার ২৪ শতাংশ বা আড়াই কোটি মানুষ এই শ্রেণিভুক্ত, যার সিংহভাগই মুসলিম৷ ফলে এ দিন মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষিত সিদ্ধান্তের সুবাদে এই প্রথম গরিব মুসলিমরা এ রাজ্যে ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার-সহ উচ্চ শিক্ষার যাবতীয় কোর্সে সংরক্ষণের সুবিধা পাবে৷ একই সুবিধা পাবে অন্যান্য ধর্মের পিছিয়ে থাকা অংশ৷ পঞ্চায়েত ভোটের আগে যা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মাস্টার স্ট্রোক হিসাবেই দেখছে রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকেরা৷ সিপিএম তো বটেই, একদা জোটসঙ্গী কংগ্রেসের দুর্গ মালদহ, মুর্শিদাবাদেও সংরক্ষণের এই সিদ্ধান্ত ভোটের ময়দানে বড় হাতিয়ার হতে পারে তৃণমূলের৷ ২০০৮-এর পঞ্চায়েত ভোটে বিপর্যয়ের আঁচ পেয়ে বামফ্রন্ট সরকার ওবিসি ভোটকে হাতিয়ার করতে সরকারি চাকরিতে সংরক্ষণের মাত্রা ৭ থেকে বাড়িয়ে ১০ শতাংশ করেছিল৷ কিন্ত্ত সিপিএমের মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য উচ্চ শিক্ষায় ওবিসি সংরক্ষণ চালু করার ঘোর বিরোধী ছিলেন৷ তাঁর সময়ে অনগ্রসর কল্যাণ দপ্তরের মন্ত্রী উপেন কিস্কু তিন বার মন্ত্রিসভায় প্রস্তাব পেশ করলেও বুদ্ধদেববাবুর আপত্তিতে তা খারিজ হয়ে যায়৷ আরও আগে, বামফ্রন্ট সরকারের জন্মলগ্নে ওবিসি সংরক্ষণ নিয়ে কেন্দ্রের গঠিত কমিটির (বিন্দেশ্বরী প্রসাদ কমিটি) কাছে দাবি করা হয়েছিল, এ রাজ্যে ওবিসি বলে কিছু নেই৷
পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতিতে এত কাল অনুপস্থিত ধর্ম এবং জাতের এই মিশেলকে অবশ্য শিক্ষাঙ্গনের সকলেই বাঁকা চোখে দেখতে নারাজ৷ যেমন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য সুরঞ্জন দাসের মতে, 'পিছিয়ে থাকা অংশের মানুষের সামাজিক ক্ষমতায়নের এর চেয়ে বড় দৃষ্টান্ত কমই আছে৷' তিনি আরও বলেন, অনেক রাজ্য আগেই এই সুবিধা দিয়েছে৷ সূত্রের খবর, কেন্দ্রীয় সরকার বছর দুয়েক আগে কেন্দ্রীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলিতে ওবিসি'দের জন্য ৩০ শতাংশ আসন সংরক্ষণ করতে আসন বৃদ্ধির একই পদ্ধতি অনুসরণ করেছিল৷
সরকারি চাকরিতে ওবিসি'দের জন্য ১৭ শতাংশ সংরক্ষণ আগের সরকারই চালু করে গিয়েছে৷ যদিও বিগত কয়েক বছর যাবত্ সরকারি দপ্তরে নিয়োগ কার্যত বন্ধ৷ তবে চাকরিতে সংরক্ষণ কার্যকর করার চেয়ে শিক্ষায় তা বলবত্ করা অনেক কঠিন৷ উচ্চ শিক্ষায় সংরক্ষণ চালু করতে প্রায় ৪৫ শতাংশ পর্যন্ত আসন বৃদ্ধি প্রয়োজন বলে ব্রাত্যবাবু জানিয়েছেন৷ এর কারণ ব্যাখ্যা করে অনুন্নত শ্রেণি কল্যাণ দপ্তরের এক পদস্থ অফিসার বলেন, সাধারণ ক্যাটিগরির ছাত্রছাত্রীদের জন্য বরাদ্দ আসন অক্ষুণ্ণ রাখলেই শুধু হবে না, বর্ধিত আসনেরও তফসিলি এবং তফসিলি উপজাতি ভুক্তদের জন্য সাংবিধানিক বিধান মেনে যথাক্রমে ২২ ও ৬ শতাংশ আসন সংরক্ষণ করতে হবে৷ স্বভাবতই শুধু ১৭ শতাংশ আসন বাড়িয়ে ওবিসি সংরক্ষণ কার্যকর করা সম্ভব নয়৷
রাজ্যে উচ্চ শিক্ষার বিভিন্ন কোর্সে এখন ৬ লাখ ১০ হাজার আসন আছে৷ সংরক্ষণের সুবিধা দিতে তা ৪৫ শতাংশ বাড়িয়ে আরও ২ লাখ ৭৫ হাজার নতুন আসন সৃষ্টি করতে হবে৷ আর তার জন্য কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের ঘরবাড়ি-সহ নানা পরিকাঠামো বৃদ্ধি এবং শিক্ষক নিয়োগ প্রয়োজন৷ স্বভাবতই এর সঙ্গে বিপুল আর্থিক দায় জড়িয়ে৷ বিরোধীদের একাংশ এই সিদ্ধান্তকে একান্তে সরকারি কোষাগারের বিনিময়ে তৃণমূলের ভোট কেনার চেষ্টা বললেও প্রকাশ্যে মুখ খোলেনি ভোট রাজনীতির কথা ভেবেই৷ আর্থিক বোঝার বিষয়টি মুখ্যমন্ত্রীও এড়িয়ে যাননি৷ তিনি বলেন, 'আগামী আর্থিক বছরে এ জন্য এক হাজার কোটি টাকা অতিরিক্ত বরাদ্দ থাকবে৷ পরের ৬ বছর ৬০০ কোটি টাকা করে বরাদ্দ রাখা হবে পরিকাঠামো গড়তে৷' মহাকরণ সূত্রের খবর, কেন্দ্রীয় সরকারের শতাধিক প্রকল্প আছে যা থেকে শিক্ষার প্রসার-সহ সামাজিক ক্ষমতায়নের লক্ষ্যে রাজ্যগুলিকে অর্থ সাহায্য দেওয়া হয়৷ দিল্লির এই ধরনের কোন প্রকল্প থেকে কত টাকা পাওয়া যেতে পারে তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে৷
সমালোচকরা বলছেন, সিনেমাটিতে নিম্নবর্ণের হিন্দুদের তুলে ধরতে গিয়ে আপত্তিকর পরিভাষা ব্যবহার করা হয়েছে। তবে সমাজের বিতর্কিত বিষয় নিয়ে সিনেমা তৈরির জন্য বিখ্যাত পরিচালক প্রকাশ ঝা এ অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। উত্তর প্রদেশ সরকার সিনেমাটির ওপর দু`মাসের নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। অন্যদিকে পাঞ্জাব কর্তৃপক্ষ বলেছে, রাজ্য সরকারের গঠিত একটি প্যানেল সিনেমাটি দেখার পর এটি মুক্তি দেয়া হবে কিনা সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে।
অরক্ষণ সিনেমাটি আজ মুক্তি পেলেও এর বিজ্ঞাপন প্রচার ও পোস্টার বিলি করা হচ্ছিল কয়েক সপ্তাহ আগে থেকে। বিক্ষোভকারীরা ভারতের বিভিন্ন স্থানে ছবিটির পোস্টার ছিড়ে ফেলে। তাদের অভিযোগ সিনেমাটিতে নিম্ন-বর্ণের দলিত হিন্দু বা অচ্ছুৎদের সম্পর্কে অবমাননাকর কথাবার্তা রয়েছে। কোন কোন দলিত গ্রুপ মুসলিম জমিদার পরিবারের সন্তান- অভিনেতা সাইফ আলী খানকে নিম্ন-বর্ণের হিন্দু`র চরিত্রে অভিনয়ের ব্যাপারে আপত্তি তুলেছে।
কী রয়েছে ছবিটিতে
ভারতের তিন প্রদেশ অরক্ষণ`কে নিষিদ্ধ করলেও ভারতের সেন্সর বোর্ড এটি মুক্তির অনুমতি দিয়েছে এবং এর অভিনেতা-অভিনেত্রীরা বলছেন, সিনেমাটিতে আপত্তিকর কোন বিষয় নেই। অমিতাভ বচ্চন সিনেমাটি নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্তের ব্যাপারে প্রশ্ন তুলেছেন তার ব্যক্তিগত ব্লগে। পরিচালক প্রকাশ ঝা গত সপ্তাহে তার এ ছবি সম্পর্কে বলেছেন, ভারতে এই কোটা ব্যবস্থায় কিছু লোক সুবিধা পাচ্ছে, আবার কিছু লোক সুবিধা পাওয়ার অধিকার থাকা সত্ত্বেও তা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। তিনি তার এ ছবিতে এ চরম বাস্তবতা তুলে ধরেছেন বলে জানান। মিস্টার ঝা বলেন, পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যেন, ভারত ভারতের বিরুদ্ধে লড়াই করছে। অরক্ষণ ছবিতে এই দুই পক্ষের মধ্যে সেতুবন্ধন তৈরির চেষ্টা হয়েছে বলে তিনি দাবি করেন।
ভারতের কোটা ব্যবস্থায় কলেজ ও সরকারী চাকুরিতে সমাজের পিছিয়ে পড়া মানুষের জন্য বিশেষ সুবিধা রাখা হয়েছে। এ পদ্ধতির সমর্থকরা বলছেন, সমাজের যে শ্রেণীর মানুষের পক্ষে উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত হওয়া কখনওই সম্ভব ছিল না, তাদের পক্ষে সে শিক্ষা অর্জনের সুযোগ তৈরি হয়েছে। তবে সমালোচকরা বলছেন, কোটা পদ্ধতির কারণে জাতপাত ও ধর্মের নামে ভারতীয় নাগরিকদের মধ্যে বিভেদ তৈরি করা হচ্ছে।
সর্বশেষ পাওয়া খবরে জানা গেছে, অরক্ষণ ছবির পরিচালক প্রকাশ ঝা তিনটি রাজ্যে তার সিনেমার ওপর নিষেধাজ্ঞার বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে অভিযোগ দায়ের করেছেন। তিনি বলেছেন, ভারতের সংবিধানে বাক স্বাধীনতার যে গ্যারান্টি দেয়া হয়েছে, ওই নিষেধাজ্ঞার ফলে তা লংঘিত হয়েছে।
ভোটের পালে বেকার টানতে নয়া ভাতা
আনন্দবাজার – মঙ্গল, ১২ মার্চ, ২০১৩যুব উৎসাহ প্রকল্প। এ বারের রাজ্য বাজেটে বেকার ভাতা দেওয়ার নতুন প্রকল্প ঘোষণা করলেন অথর্মন্ত্রী অমিত মিত্র। ১৮ থেকে ৪৫ বছর বয়সি এবং অষ্টম মান পাশ করা বেকাররা রাজ্য সরকারের এমপ্লয়মেন্ট ব্যাঙ্কে নাম তোলালেই পাবেন মাসিক দেড় হাজার টাকা। তবে সকলেই নয়, রাজ্যের নথিভুক্ত এক কোটি বেকারের মধ্যে ১ লক্ষ জনকে বেছে নিয়ে এই প্রকল্প চলবে বলে জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্র। এর ফলে সরকারের মাসে ১৫ কোটি অর্থাৎ বছরে ১৮০ কোটি টাকা খরচ হবে। যা দান-খয়রাতির তালিকায় নবতম সংযোজন।
এই বেকার ভাতা প্রাপকের সংখ্যা নিয়ে ইতিমধ্যেই নানা প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। এই এক লক্ষ বেকার বাছাইয়ের মাপকাঠি কী, তা নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে। অর্থমমন্ত্রী অবশ্য কোনও ব্যাখ্যাই দেননি। আরও একটি প্রশ্ন থাকছে। তা হল, যে এক লক্ষ বেকার এই ভাতা পাবেন, ধরা যাক তাঁদের একটা অংশ চাকরি পেয়ে গেলেন। প্রশ্ন উঠছে, তখন কি ভাতা প্রাপকের সংখ্যা এক লক্ষের কম হবে? সরকারের একটি সূত্রের বক্তব্য, ভাতা প্রাপকের সংখ্যাটা এক লক্ষই থাকবে। যাঁরা চাকরি পেয়ে যাবেন, তাঁদের নাম ভাতা প্রাপকের তালিকা থেকে বাদ গিয়ে সেখানে নতুন বেকারের নাম ঢুকবে। এ ভাবেই চলবে পুরো প্রক্রিয়া। সরকারের এক কর্তার সরস মন্তব্য, "এ পুরো ওয়াটার অফ ইন্ডিয়া!"
চলতি আর্থিক বছরেই খয়রাতির একগুচ্ছ প্রকল্প চালু করেছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার। ইমাম-মোয়াজ্জিনদের ভাতা দেওয়ার যে নতুন প্রকল্প চালু করা হয়েছে, তাতে সরকারের প্রায় ২০০ কোটি টাকা খরচ হয়েছে। শিল্পী-গায়ক-গায়িকাদের নানাবিধ পুরস্কারে গলেছে কয়েক কোটি। বিধায়কদের সুপারিশ মেনে প্রায় ১৬০০ ক্লাবের জন্য সরকার পরিকল্পনা খাত থেকেই খরচ করেছে ৪০ কোটি টাকা। সম্প্রতি রাজ্যের সবক'টি ব্লকের অসংখ্য ক্লাবের ক্যারম বোর্ড, ক্রিকেট ব্যাট-সহ নানা ক্রীড়া সরঞ্জাম কেনার জন্য বরাদ্দ হয়েছে ১০ কোটি টাকা। এ ছাড়া উৎসব অনুষ্ঠানের লাগামছাড়া খরচ তো রয়েইছে। তারই সূত্র ধরে পঞ্চায়েত ভোটের ঠিক আগে বেকারদের জন্য খয়রাতির নতুন প্রকল্প ঘোষণা করলেন অমিত মিত্র। এতেই স্পষ্ট, সরকারের আয় বাড়লেও স্থায়ী সম্পদ তৈরির দিকে বিশেষ নজর নেই মহাকরণের।
২০১২-১৩ সালের বাজেট প্রস্তাবে সরকার ১৬ হাজার ৫৭১ কোটি টাকা মূলধন খাতে অর্থাৎ স্থায়ী সম্পদ তৈরিতে বরাদ্দ করেছিল। পরবর্তী কালে সংশোধিত ব্যয় বরাদ্দে সেই টাকার পরিমাণ কমিয়ে ১৫ হাজার ১৩৭ কোটি টাকা করা হয়। কারণ, এই খাতের খরচ কমিয়েই করা হয়েছে দান-খয়রাতি! ২০১৩-১৪ সালের বাজেটে সরকার মূলধন খাতে প্রায় ১৯ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ করলেও অর্থ দফতরের কর্তাদের একাংশের বক্তব্য, এ বারেও বছর শেষে বরাদ্দ কমবে।
সরকারি কর্তাদের একাংশ জানিয়েছেন, চলতি আর্থিক বছরে পরিকল্পনা খাতে ২৩ হাজার কোটি টাকার বাজেট বরাদ্দ করা হয়েছিল। বাস্তবে খরচ হয়েছে মাত্র ৩৫ শতাংশ! এ বারেও বাজেটে পরিকল্পনা খাতে ২৬ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। কিন্তু অর্থ দফতরের কর্তারাই বলছেন, এটা আসলে লোক দেখানো বরাদ্দ। শেষ পর্যন্ত অনেক দফতরই অর্ধেক টাকাও খরচ করতে পারবে না। স্থায়ী সম্পদ তৈরির প্রশ্নে সরকারের যখন এমন মনোভাব, তখন পরিকল্পনা বহির্ভূত খাতে চলতি আর্থিক বছরে যে টাকা ধরা হয়েছিল, তার থেকে অন্তত ৪০০ কোটি টাকা বাড়তি খরচ হয়ে গিয়েছে। অর্থাৎ সরকারের খরচের অভিমুখ দান-খয়রাতির দিকেই!
অর্থ দফতরের কর্তাদের অনেকেই জানিয়েছেন, এ বারও বাজেটে যে সব প্রকল্প ঘোষণা হয়েছে, তাতে পরিকল্পনা বহির্ভূত খাতে খরচ আরও বাড়বে। ফলে সরকারকে এক দিকে যেমন নিজস্ব কর আদায়ের উপর জোর দিতে হবে, তেমনই বাজার থেকে নেওয়া ঋণের উপরও ভরসা বাড়াতে হবে। সেই কারণেই বাজার থেকে ২১ হাজার ২২৯ কোটি টাকা ধার নেওয়ার কথাও এ বারের বাজেটে উল্লেখ করা হয়েছে বলে দফতরের কর্তারা জানিয়েছেন। এই পুরো অর্থ বাজার থেকে তোলা হলে রাজ্যের ঋণের পরিমাণ বেড়ে দাঁড়াবে ২ লক্ষ ৪৭ হাজার কোটি টাকা।
সীমাহীন খরচের কারণেই ১১ হাজার কোটি টাকা বাড়তি রোজগারের পরেও সরকারের রাজস্ব ঘাটতির পরিমাণ প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে। বিরোধী দলনেতা সূর্যকান্ত মিশ্র বলেন, "সে তো হবেই! মুখ্যমন্ত্রীর যা মনে হচ্ছে, খয়রাতির ঘোষণা করে দিচ্ছেন। তার পর অর্থমন্ত্রীর কাজ হচ্ছে টাকা জোটানো। ফলে রাজস্ব ঘাটতি বাড়বে, এটাই স্বাভাবিক।" অর্থনীতিবিদদের অভিযোগও একই।
আনন্দবাজার পত্রিকা
ধাঁধা | |
ঘরের ভিতর ঘর, তাহার ভিতরে ঘর কেন্দ্রীয় সরকারও বুঝি এই ধাঁধাটির খোঁজ পাইয়াছে, এবং অনুপ্রাণিত হইয়া অন্য একটি ধাঁধা তৈরি করিয়াছে সংরক্ষণের ভিতর সংরক্ষণ, তাহার ভিতর সংরক্ষণ। এই ধাঁধাটির উত্তর, কেন্দ্রীয় সরকারের মতে, অন্যান্য অনগ্রসর শ্রেণির জন্য সংরক্ষিত ২৭ শতাংশ আসনের মধ্যে ৪.৫ শতাংশ আসন সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের অনগ্রসর শ্রেণির মানুষদের জন্য সংরক্ষণ করা। এই ধাঁধাটিও হয়তো পূর্বোক্ত ধাঁধাটির ন্যায় কালজয়ী হইতে পারিত, কিন্তু বাদ সাধিয়াছে সুপ্রিম কোর্ট। দেশের সর্বোচ্চ আদালত জানিতে চাহিয়াছে, কীসের ভিত্তিতে এই সংরক্ষণ? কেন্দ্রীয় সরকারের নিকট কি প্রয়োজনীয় তথ্য, নথিপত্র মজুত আছে? আপাতত নথির খোঁজ চলিতেছে বটে, কিন্তু সরকারের এই সংরক্ষণেচ্ছার কারণ সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মঙ্গলচিন্তা নহে, ২০১৪ সালের লোকসভা নির্বাচন, তাহাতে সংশয় নাই। বস্তুত, সকল রাজনীতিকের তূণেই ব্রহ্মাস্ত্রটির নাম সংরক্ষণ রাজনৈতিক ভাবে কোণঠাসা হইয়া পড়িলেই এই অস্ত্রটির প্রয়োগ জরুরি হইয়া পড়ে। তাহাকে সংখ্যালঘু উন্নয়নের মায়ামন্ত্রঃপূত করিতে পারিলে তো আর কথাই নাই। ভারতে কেন সংরক্ষণের ব্যবস্থা হইয়াছিল, কত দিনের জন্য হইয়াছিল, সবই বহুচর্চিত। স্বাধীনতা অর্জনের পরে দেশনেতারা যে ধারণাগুলিকে কেন্দ্রে রাখিয়া নূতন ভাবে দেশটিকে গড়িতে চাহিয়াছিলেন, রাজনীতির দশচক্রে সেই ধারণাগুলির সবই ধূলিসাৎ হইয়াছে। কিন্তু, সংরক্ষণের ব্যবস্থাটির ন্যায় এমন অপব্যবহার বুঝি আর কোনও ধারণার হয় নাই। যথেচ্ছ সংরক্ষণ হইয়াছে, কিন্তু তাহাতে ফল হয় নাই। হইলে, আজ আর নূতন করিয়া সংরক্ষণের প্রয়োজন হইত না। সুপ্রিম কোর্টের বিচারক বিস্ময় প্রকাশ করিয়া জানিতে চাহিয়াছেন, কোন আইনের ভিত্তিতে কেন্দ্রীয় সরকার এমন একটি সংরক্ষণের পথে হাঁটিল? আইন আছে কি না, সেই প্রশ্ন ভিন্ন। কিন্তু, ধর্মের ভিত্তিতে সংরক্ষণ ভারতীয় সংবিধানের দর্শনের, অন্তর্নিহিত ভাবাদর্শের বিরোধী। স্বাধীনতা অর্জনের পর যখন নূতন ভাবে দেশ গড়িবার কাজ চলিতেছিল, তখন নেতারা সচেতন ভাবেই ধর্মকে ব্যক্তিগত পরিসরে আবদ্ধ রাখিবার কথা ভাবিয়াছিলেন। স্থির হইয়াছিল, ধর্মীয় পরিচয়ের ভিত্তিতে কাহারও সহিত কোনও বৈষম্য করা হইবে না, কোনও বিশেষ সুবিধাও দেওয়া হইবে না। স্বীকার করা প্রয়োজন, পরবর্তী সময়ে রাজনীতি এই আদর্শ হইতে বিচ্যুত
|